Sastha Seba

November 10, 2024

বুকের ডান পাশে ব্যথা: কারণ, লক্ষণ এবং ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়।

আজকাল বুকের ডান পাশে ব্যথা একটি খুব সাধারণ সমস্যায় পরিণত হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, আমরা মনে করি বুকের বামদিকে ব্যথা মানেই হার্টের সমস্যা বা স্ট্রোক। তবে, বুকের ডান পাশে ব্যথা হলে এর কারণ কী বা কী করতে হবে তা অনেকেরই অজানা। ফলে সঠিক সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ না নেওয়ার কারণে দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক সমস্যায় ভুগতে হয়।


বুকের ডান পাশে ব্যথা

তাই আজকের ব্লগে জানবো বুকের ডান পাশে ব্যথা হয় কেন, বুকের ডান পাশে ব্যথা কিসের লক্ষণ, বুকের ডান পাশে ব্যথার কারণ কি, গর্ভাবস্থায় বুকের ডান পাশে ব্যথা, বুকের ডান পাশের ব্যথা কীভাবে প্রতিরোধ করা যায় এবং বুকের ডান পাশে ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় নিয়ে।

পেজের সূচিপত্র: বুকের ডান পাশে ব্যথা কমানোর উপায় এবং বুকের ডান পাশে ব্যথা কিসের লক্ষণ

  • বুকের ডান পাশে ব্যথা হওয়ার কারণ কী?

  • বুকের ডান পাশে ব্যথা কিসের লক্ষণ

  • বুকের ডান পাশে ব্যথা হয় কেন

  • বুকের ডান পাশে উপরে ব্যথা কেন হয়

  • শ্বাস নিলে বুকের ডান পাশে ব্যথা

  • গর্ভাবস্থায় বুকের ডান পাশে ব্যথা

  • বুকের ডান পাশে ব্যথা প্রতিরোধ

  • বুকের ডান পাশে ব্যথা কমানোর ঔষধ

  • বুকের ডান পাশে ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

 

বুকের ডান পাশে ব্যথার কারণ কি?

বুকের ডান পাশের মাংসপেশীর সংকটের কারণে বুকের ডান পাশে ব্যথা হতে পারে। বুকের ডান পাশের দেয়ালে মাংসপেশীর আঘাতের কারণে ব্যাথা হতে পারে। বুকের পাঁজরের দেয়ালে কোনো আঘাত পেলে বা পাঁজরের তরিণাস্থি কোনো কারণে আঘাত প্রাপ্ত হলে বুকের ডান পাশে ব্যথা হতে পারে।

নিউমোনিয়া অনেক গুরুতর হলে অনেক সময় তা ফুসফুসকে সংক্রমণ করে ফেলে। এর ফলে বুকের ডান পাশে ব্যথা হতে পারে।

গলব্লাডার বা পিত্ত থলিতে কোনো সমস্যা থাকলেও বুকের ডান পাশে ব্যথা হতে পারে। গলব্লাডারে প্রদাহ থাকলে বা পাথর থাকলেও অনেক সময় বুকের ডান পাশে ব্যথা হয়ে থাকে।

অ্যাসিডিটি হলে অনেক সময় বুকের ডান দিকে বা পেটের উপরের অংশে ব্যথা হয়। খাওয়ার পর সাধারণত এই ব্যথা হয়ে থাকে। এই ব্যথা কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

দাদ হলে অনেক সময় বুকের ডান দিকে ব্যথা হয়ে থাকে। এটি একটি ভাইরাল সংক্রমণ। এটি হলে ফুসকুড়ি ওঠে।

অনেক সময় হার্ট অ্যাটাক হলেও বুকের ডান পাশে ব্যথা হয়ে থাকে। যদিও সচরাচর এমন হয় না।

এছাড়াও লিভারের কোনো সমস্যা যেমন- হেপাটাইটিস হলে বুকের ডান দিকে ব্যথা হতে পারে। স্ট্রেস বা কোনো মানসিক উদ্বেগের কারণেও বুকের ডান পাশে অনেক সময় ব্যথা হতে পারে।

আরও পড়ুনঃ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের উপায়

বুকের ডান পাশে ব্যথা কিসের লক্ষণ

বুকের ডান পাশে ব্যথা হলে নিচের উপসর্গ বা লক্ষণ গুলো দেখা দিতে পারে।

  • বুকের ডান দিকে তীব্র ব্যথা
  • সূক্ষ্ম চিনচিনে ব্যথা অনুভব করা
  • বুক জ্বালাপোড়া করা
  • নড়াচড়া করলে বা জোরে শ্বাস নিলে ব্যথার মাত্রা বেড়ে যাওয়া
  • ব্যথা বুকের ডান পাশ থেকে পিঠে, হাতে বা চোয়ালে ছড়িয়ে পড়া
  • কাশি ও শ্বাসকষ্ট হওয়া
  • বমি বমি ভাব হওয়া
  • ঘাম হওয়া  
এই লক্ষণগুলো থাকলে মোটেই হেলা ফেলা করা ঠিক হবে না। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রোগ নির্ণয় করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।
বুকের ডান পাশে ব্যথা কিসের লক্ষণ

বুকের ডান পাশে ব্যথার কারণ নির্ণয়

যদি বুকের ডান পাশে ব্যথা অনুভূত হয়, সময় নষ্ট না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্যথা সাধারণ কারণের জন্য হতে পারে, তবে এটি আরও গুরুতর কোনো সমস্যার লক্ষণও হতে পারে। সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য ডাক্তার বিভিন্ন পরীক্ষার পরামর্শ দিতে পারেন।

বুকের ডান পাশে ব্যথার সঠিক কারণ নির্ণয়ে প্রয়োজনীয় টেস্ট:

১. বুকের এক্স-রে:
বুকের এক্স-রে সাধারণত ফুসফুস বা বুকের ভেতরের অন্যান্য অঙ্গের অবস্থা যাচাই করতে ব্যবহৃত হয়। যদি ফুসফুসের কোনো প্রদাহ, সংক্রমণ, বা অস্বাভাবিকতা থাকে, তাহলে এক্স-রে তা সনাক্ত করতে সাহায্য করবে।

২. ইসিজি (ECG):
হার্টের সমস্যা সনাক্ত করতে ইসিজি একটি প্রয়োজনীয় পরীক্ষা। যদি ব্যথার সঙ্গে হার্টবিট বেড়ে যাওয়া, বমি, বা ঘাম হওয়া লক্ষ করা যায়, ইসিজি করতে দেরি করা উচিত নয়। এটি হার্ট অ্যাটাক বা কোনো হৃদরোগ রয়েছে কি না তা দ্রুত নির্ণয় করতে পারে।

৩. সিটি স্ক্যান (CT Scan):
ফুসফুসে রক্ত জমাট বাঁধা বা অন্য কোনো গঠনতন্ত্রের সমস্যার জন্য সিটি স্ক্যান প্রয়োজন হতে পারে। এটি আরও বিস্তারিতভাবে ফুসফুস এবং বুকের ভেতরের অঙ্গগুলো পর্যবেক্ষণ করতে সাহায্য করে।

৪. এন্ডোস্কোপি:
যদি ধারণা করা হয় যে বুকের ডান পাশের ব্যথা গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির কারণে হচ্ছে, তাহলে এন্ডোস্কোপি প্রস্তাব করা হতে পারে। এন্ডোস্কোপির মাধ্যমে পাকস্থলীর অভ্যন্তরীণ অবস্থা নিরীক্ষা করে গ্যাস্ট্রিক আলসার বা এসিড রিফ্লাক্স রয়েছে কি না তা নিশ্চিত করা সম্ভব।

সঠিক রোগ নির্ণয়ের গুরুত্ব:

এই পরীক্ষাগুলো করলে বুকের ডান পাশের ব্যথার সঠিক কারণ সহজেই নির্ণয় করা সম্ভব। এর ফলে চিকিৎসক নির্দিষ্ট সমস্যার জন্য সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

কেন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি?

  • অনেক সময় বুকের ডান পাশের ব্যথা সাধারণ কারণে হতে পারে, যেমন পেশীর টান বা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা। তবে এটি হার্টের সমস্যা, ফুসফুসে সংক্রমণ, বা পিত্তথলির প্রদাহের মতো জটিল সমস্যার লক্ষণও হতে পারে।
  • সঠিক সময়ে ডাক্তারের কাছে গেলে ব্যথার প্রকৃত কারণ নির্ধারণ এবং চিকিৎসা করা সহজ হয়।

বুকের ডান পাশে ব্যথা কমানোর জন্য প্রাথমিক পরামর্শ:

  • প্রচুর পানি পান করুন এবং হালকা খাবার খান।
  • ব্যথার তীব্রতা বাড়লে নিজে থেকে ওষুধ না খেয়ে দ্রুত ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
  • ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী টেস্ট করান এবং নিয়মিত চেকআপ করুন।

বুকের ডান পাশে ব্যথা অবহেলা করার মতো বিষয় নয়। সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিলে এই সমস্যার সমাধান দ্রুত এবং কার্যকরভাবে করা সম্ভব।

 

গর্ভাবস্থায় বুকে ব্যথা

গর্ভাবস্থায় বুকের ডান পাশে ব্যথা একটি সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা, যা অনেক নারীই অনুভব করেন। এই সময় শরীরের বিভিন্ন পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন ধরনের ব্যথা হতে পারে। বিশেষ করে, বুকের ডান পাশে ব্যথা গর্ভাবস্থায় বেশ পরিচিত একটি বিষয়।

বুকের ডান পাশে ব্যথার কারণ গর্ভাবস্থায়
১. বদহজম এবং গ্যাসের সমস্যা: গর্ভাবস্থায় বদহজম একটি কমন সমস্যা। হরমোনের পরিবর্তন এবং বাচ্চার আকার বৃদ্ধির ফলে পাকস্থলীর উপর চাপ বাড়ে, যা বুকের ডান পাশে ব্যথার কারণ হতে পারে।

২. হরমোনের প্রভাব: প্রোজেস্টেরনের মতো হরমোন স্তরের বৃদ্ধি বুকের পেশীতে শিথিলতা আনে, যা বুকের জ্বালা এবং ব্যথার কারণ হতে পারে।

৩. শিশুর আকার বৃদ্ধি: গর্ভের ভেতরে শিশুর আকার বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বুক এবং পেটের পেশীর উপর চাপ পড়তে থাকে। এটি বুকের ডান পাশের ব্যথা তৈরি করতে পারে।

৪. স্তনের আকার পরিবর্তন: গর্ভাবস্থায় স্তনের আকার পরিবর্তনের ফলে বুকের পেশীতে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

৫. পিত্তথলির সমস্যা: গর্ভাবস্থায় পিত্তথলিতে পাথর বা প্রদাহ হলে বুকের ডান দিকে এবং পেটের পাশে ব্যথা হতে পারে।

ব্যথা কমানোর উপায়:
১. ডাবের পানি: বদহজম বা এসিডিটি দূর করতে ডাবের পানি খুবই কার্যকর। এটি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং বুকের জ্বালা কমায়।

২. আপেল সাইডার ভিনেগার: হালকা এসিডিটির ক্ষেত্রে এক গ্লাস পানির সঙ্গে এক চা চামচ আপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এটি গ্যাস এবং বুকের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।

৩. ডাক্তারের পরামর্শ নিন: গর্ভাবস্থায় বুকের ডান পাশে ব্যথা অনুভব করলে দ্রুত ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। পেশাদার পরামর্শ অনুযায়ী নিয়ম মেনে চলুন, যেন ব্যথা সহজে উপশম হয়।

গর্ভাবস্থায় বুকের ডান পাশে ব্যথা প্রতিরোধে টিপস:

  • ভারী খাবার এড়িয়ে ছোট ছোট অংশে খাবার খান।
  • তেলযুক্ত এবং মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করুন, যা শরীরের রক্তসঞ্চালন উন্নত করবে।

গর্ভাবস্থায় বুকের ডান পাশে ব্যথা হলে এটি অবহেলা না করে সঠিক যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। এই ব্যথার প্রকৃতি এবং তীব্রতা বুঝে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করলে সমস্যার সমাধান দ্রুত হতে পারে।


বুকের ডান পাশে ব্যথা প্রতিরোধ

বুকের ডান পাশের ব্যথা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যকর লাইফ স্টাইল মেনে চলতে হবে। নিচের পদক্ষেপগুলো মেনে চলা যেতে পারে-

  • খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে ফলমূল ও রঙ্গিন শাকসবজি রাখা যেতে পারে। অস্বাস্থ্যকর খাবার, অতিরিক্ত তেল মসলাযুক্ত খাবার, ডুবো তেলে ভাজা খাবার, প্রসেসড ফুড গ্রহণ থেকে দূরে থাকতে হবে। জাঙ্ক ফুড খাওয়ার অভ্যাস কমাতে হবে। ঘরে তৈরি কম তেল ও মসলাযুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
  • নিয়মিত ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ করতে হবে। প্রতিদিন সময় বের করে হাঁটা, সাঁতার কাটা বা দৌড়ানো যেতে পারে। এছাড়া ইয়োগা করতে পারেন।
  • স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে হবে। অতিরিক্ত ওজন ঝেড়ে ফেলতে হবে। যা হার্ট, লিভার, ফুস্ফুস সব কিছুর জন্যই ভালো।
  • ধূমপান ত্যাগ করতে হবে। এতে করে হার্ট এবং ফুস্ফুস ভালো থাকবে।
  • অ্যালকোহল পান করা থেকে দূরে থাকা গেলে সবচেয়ে ভালো। তা পারা না গেলে পানের মাত্রা কমিয়ে আনতে হবে।
  • হাইড্রেটেড থাকতে হবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান করতে হবে।
  • কোনো সমস্যা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।

বুকের ডান পাশে ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

  • পরিমিত পরিমাণ বিশ্রাম নিতে হবে। ভারী কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। যেন ব্যথা বেড়ে না যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে।
  • ব্যথা কমাতে হিটিং প্যাড অথবা আইস ব্যাগ ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি ব্যথা উপসম করতে সহায়তা করবে।
  • শরীরে অক্সিজেনের প্রবাহ উন্নত করতে ব্রিথিং এক্সারসাইজ করা যেতে পারে।
  • হাইড্রেটেড থাকতে হবে। প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে।
  • পেশীর টান বা ব্যথা কমাতে হালকা স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করতে পারেন। এতে করে পেশীর নমনীয়তা বাড়বে ও ধীরে ধীরে ব্যথা কমে যাবে। হালকা যোগ ব্যায়াম বা ইয়োগা করা যেতে পারে
  • যেসব খাবার বা কার্যকলাপ বুকের ব্যথাকে ট্রিগার করে সেই সব কাজ এড়িয়ে চলতে হবে।

 

পরিশেষে বলবো বুকের ডান পাশে ব্যথা যে কোনো সময় হতে পারে। তাই এর কারণ ও প্রতিকার গুলো জেনে রাখলে সহজেই এর সমাধান পাওয়া যাবে। আর ঘরোয়া উপায় গুলো জানা থাকলে ডাক্তারের কাছে যেতে একটু দেরী হয়ে গেলেও সাময়িক আরাম পাওয়া যায়। তবে অবশ্যই নিয়ম মেনে স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল মেন্টেইন করলে খুব সহজেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সেজন্য আগে থেকেই সতর্ক হতে হবে এবং বুকের ডান পাশে ব্যথা হলে বিচলিত না হয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করলেই সহজেই এর থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।